আমাদের চারপাশের সবকিছুই নিয়েই আমাদের পরিবেশ । সুস্থ ভাবে অক্সিজেন পেয়ে বেঁচে থাকার জন্য সুস্থ পরিবেশ একান্ত প্রয়োজন। সেই পরিবেশে মানুষের অনন্ত চাহিদা আর অতিরিক্ত লোভের শিকার হয়ে ধীরে ধীরে পরিবেশ তার ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছে।
বাতাস, জল, মাটিতে দূষণের মাত্রা বিপজ্জনকভাবে বাড়ছে।যা আমাদের পরিবেশের জন্য খুবই হুমকিস্বরুপ৷ পরিবেশকে হুমকিতে ফেলানোর অন্যতম বিষয় হল কলকারখানা থেকে নির্গত বিষাক্ত ধোঁয়া, যানবাহন থেকে নির্গত বিষাক্ত ধোঁয়ার মানুষ সর্দি-কাশি, হাঁপানি ,নিউমোনিয়ার মতো অসুখে আক্রান্ত হচ্ছে বা তার ব্যাধির প্রকোপ বাড়ছে।
ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গাছপালা ,এমনকি জড় জগৎও। কলকারখানার বর্জ্য পদার্থ, কৃষি কাজে ব্যবহৃত রাসায়নিক সার কীটনাশক জ্বালানি ,হিসেবে ব্যবহৃত তেল প্রতিনিয়ত দূষিত করে তুলছে। এসব বর্জ্যে, শহরাঞ্চলে আবর্জনায় আর জঞ্জালে মাটি ও দূষিত হচ্ছে। যানবাহনের প্রবল শব্দ ,শব্দবাজি ,মাইক্রোফোনের উচ্চশব্দ স্নায়ুতন্ত্রকে বিকল করে দিচ্ছে , বধিরতা সৃষ্টি করছে, হৃদস্পন্দনের হারে তারতম্য রক্তচাপের হ্রাস বৃদ্ধির কারণ হয়ে উঠছে। যার মাধ্যমে সমাজে আমাদের অনেক সমস্যা দেখা দিচ্ছে । পরিবেশ দূষণ পারমাণবিক অস্ত্র কে ত্বরান্বিত করে তুলছে আধুনিক বিশ্বে ক্রমবর্ধমান চাহিদাকে মূল্য দিতে মানুষ তার উন্নতি আর স্বাচ্ছন্দ্যের লক্ষ্যে পরিবেশকে প্রতিনিয়ত আঘাত করছে ।উপেক্ষা করছে প্রকৃতিকে। আরামের বসবাসের প্রয়োজনে মানুষ নির্বিচারে অরণ্য ধ্বংস করছে।
বিজ্ঞান আর প্রযুক্তির লক্ষ্যে ভুলে গেছে পরিবেশের ভারসাম্যের দিকটিকে। এই দূষণ এর কবল থেকে বাঁচতে বিশ্বের প্রতিটি মানুষকে দায়িত্ব নিতে হবে। পরিবেশ কে ধ্বংসের লীলা থেকে বাঁচাতে হলে আমাদেরকে পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠার পাশাপাশি তাকে সুস্থ রাখার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে। এর জন্য তরুণরাই পারে বিভিন্ন সচেতন ক্যাম্পেইন এর মাধ্যমে সকলকে জাগ্রত করতে। পাশাপাশি অদম্য শক্তিকে কাজে লাগিয়ে সকলকে উদ্ধুদ্ধ করতে পারে তরুন ছাত্র সমাজ। কেননা তরুনরাই ভবিষ্যতে সুনাগরিক পরিবেশ সুরক্ষায় পরিকল্পনা ও পরিবেশের উন্নয়নের দায়িত্ব তারা নিলে তাদের ভবিষ্যৎ অনেক সুন্দর ও স্বাস্থ্যকর হয়ে উঠবে।
যারা পরিবেশ বিষয়ে সচেতন নয়, তাদের সচেতন করে তোলার লক্ষ্যে তরুন সমাজ এগিয়ে আসতে পারে। একত্রিত হয়ে পরিবেশ বিষয়ক বিভিন্ন পোস্টার, ফেস্টুন, চার্ট তৈরি করে শোভাযাত্রার মাধ্যমে, বিদ্যালয়,কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবেশ বিষয় নিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠান , সেমিনার আয়োজন করে সকলকে পরিবেশ দূষণ নিয়ে অবগত করতে পারে, গাছপালা না কেটে বিকল্প পদ্ধতিতে আবাসস্থল বা প্রয়োজনীয় স্হল তৈরি করার পরামর্শ দিতে হবে।
বৃক্ষরোপণ ও বন সংরক্ষণের ব্যাপারে বায়ু দূষণ, শব্দ দূষণ জল দূষণ রোধে তরুন সমাক সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরে নিজেদের দাবি জানাতে পারে। প্লাস্টিক ব্যবহারের ক্ষতি সম্পর্কে মানুষকে অবহিত করতে পারে। দূষণমুক্ত পরিবেশে গড়ে তোলার আবেদন জানিয়ে আলোচনা সভা ও পথনাটিকার আয়োজন করতে পারে। এছাড়াও পরিবেশ বিষয়ে কুইজ, ,বক্তৃতা, বিতর্ক, আলোচনা সভা আয়োজনের মধ্যে দিয়ে, পরিবেশ বিষয়ক প্রকল্প নির্মাণ,প্রাচীরপত্র লিখন, দেয়াল পত্রিকা লিখন সংবাদপত্রে প্রকাশের মাধ্যমে ও পরিবেশকে সুরক্ষার জন্য ছাত্রছাত্রীরা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে।
তা নাহলে ধীরে ধীরে পরিবেশ ধ্বংসের পথে চলে যাবে । যার মাধ্যমে বাংলাদেশ সহ বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তন হয়ে যাবে। এতে আমরাসহ বিভিন্ন পশু পাখি সহ সকল প্রানী আস্তে আস্তে পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাবো। তাই আমরা পরিবেশ দূষন, গাছপালা না কেটে প্রকৃতিকে প্রকৃতির মতো থাকতে দেব। এতে আমরা সুস্থ ভাবে জীবন যাপনও করতে পারি। একটি সুন্দর, সুস্হ পরিবেশ পাব। আসুন সচেতন হই পরিবেশ দূষণ বন্ধ করি, সুস্হ সমাজ গড়ি।
মোঃ পারভেজ হাসান।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ।