লেখা: মীর ফাহিম রুদ্র, কুমিল্লা
গেল ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ৫০ বছরের গণ্ডি পেরিয়ে আমাদের প্রিয় দেশ পা দেয় ৫১তম বছরে। গত ৫০ বৎসরে এক সময়ের ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলে ব্যঙ্গ করা এই দেশ বিশ্বের বুকে আজ উঠতি অর্থনীতির ও সম্ভাবনাময় কিছু দেশের একটি। পেয়েছে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা। সামনের দিনে দেশ হবে আরও উন্নত, হবে আরও সমৃদ্ধ এমন আশাই তো সকলের। আর সেই পরিবর্তনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিবে তরুণরা।
তবে যেই তরুণদের উপর ভর করে দেশ পাড়ি দেবে পরিবর্তনের মহাসাগর, সেই পরিবর্তনের জোয়ার আনার জন্য আমরা তরুণরা মানসিকভাবে কতটা প্রস্তুত? বর্তমানের ‘গ্লোবাল ভিলেজ’ এর কল্যাণে আমরা উন্নত অনেক দেশের নিয়ম-কানুন, শৃঙ্খলা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, চাকচিক্য ইত্যাদি সম্পর্কে সকলেই অবগত আছি। এসব খুব সহজেই আমাদের তরুণ মনকে আকৃষ্ট করে। এমন উন্নত দেশে পাড়ি জমানোর ইচ্ছা জাগে। দেশের অনেক তরুণ-তরুণী এমনকি অভিভাবকদেরও বলতে শোনা যায় আমাদের দেশে থেকে কোনো কিছুই সম্ভব হবে না বরং বিদেশে পাড়ি জমানো গেলেই জীবন হবে সার্থক। তাই উচ্চমাধ্যমিকের পর কেবল উচ্চতর শিক্ষাকে উদ্দেশ্যে করে বিদেশে যাওয়ার থেকেও নিজ দেশ থেকে কোনোমতে ছুটে পালানোর মন-মানসিকতা বিশিষ্ট শিক্ষার্থীই বেশি।
এমন মানসিকতা সৃষ্টির নেপথ্যে আমাদের সরকার, সমাজ ব্যবস্থা, পরিবার সকলেরই কম-বেশ দায় আছে। এসব সত্ত্বেও দেশের ভবিষ্যত, শিক্ষিত ও সচেতন তরুণ প্রজন্ম হিসেবে আমাদেরও অনেক কিছু বোঝার এবং বিবেচনা করার দায়িত্ব আছে বলে আমি মনে করি।
হ্যাঁ, স্বাধীনতার ৫০ বৎসর পরেও খুব দুঃখের সাথে আমাদের মেনে নিতে হয় যে, উন্নত দেশে সমূহের তুলনায় আমরা আজও সর্বদিক বিবেচনায় অনেক অনেক পিছিয়ে আছি এবং গভীরভাবে চিন্তা করলে অনেক ক্ষেত্রে দেশের ভবিষ্যত নিয়ে হতাশ হতে হয় বটে তবে বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে জয় ছিনিয়ে আনাই তো তরুণের দায়িত্ব!
যদি আমাদের পূর্ব পুরুষ চিন্তা করত যে, একদিন হয়তো আমরা পাকিস্তানিদের থেকে অধিকার ফিরে পাব আর এই ভেবে চুপ থাকত তবে আমরা কি আমাদের এই প্রাণ প্রিয় দেশকে পেতাম? যদি নিরস্ত্র বাঙালি অসীম সাহসিকতার পরিচয় না দিয়ে একসময়ের অবাস্তব মনে হওয়া দেশের স্বাধীনতাকে ছিনিয়ে না আনত তবে আমরা কখনোই নিজেকে একজন বাংলাদেশি পরিচয় দেওয়ার গৌরব অর্জন করতে পারতাম না।
আমাদেরও উচিত আমাদের নিজ ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়া। কোনো কিছুই অবাস্তব নয় আবার একদিন হবে বলে বসে থাকলেও চলবে না। আমাদের সমাজে প্রায়শই এইসব কথা বহুল প্রচলিত। একদিন হয়তো আমরা সুশিক্ষিত হব, একদিন হয়তো আমরা উন্নত হবো, একদিন হয়তো আমরা জাতির পিতার সোনার বাংলা তৈরি করবো! সেটি ভেবে আমরা মূলত নিজের পরাজয়কেই স্বীকার করে নিচ্ছি আর পরিবর্তনকে দীর্ঘায়িত করছি।
খুবই দুঃখের বিষয় যে, যেই আমরা বিদেশের পরিচ্ছন্নতা, চাকচিক্য দেখে রোমাঞ্চিত হই, সেই আমরাই চিপস খেয়ে প্যাকেটটি সবার আগে মাটিতে ফেলি। নদী ভরাট করি, গাছ কাটি, সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করি। বহুলপ্রচলিত হওয়ায় নিয়মের তোয়াক্কা না করাই নতুন নিয়ম হয়ে ঠেকেছে সমাজের কাছে। মানুষের ভাবনা এমন যে সকলে যেহেতু করছে আমিও করি বা আমি একা নিয়ম মেনে কী লাভ!
পরিবর্তনের জন্য আমাদের সবার আগে নিজেকে পরিবর্তন করতে হবে, নিজের মানসিকতাকে বদলাতে হবে। আমি পরিবর্তন হলে পরিবর্তন হবে আমার পরিবার, আমার সমাজ। সমাজ পরিবর্তন হলে রাষ্ট্রের পরিবর্তন কেবল সময়ের দাবি। অন্যের সাথে নিজের তুলনা করে পরিবর্তনের জন্য সেই একদিনের অপেক্ষা করা যে কেবলই বোকামি তা আমার মতো তরুণ প্রজন্মকে বোঝতে হবে। মনে রাখতে হবে, আমি পরিবর্তিত হলে পরিবর্তিত হবে দেশ। কারণ আমিই বাংলাদেশ!